বই রিভিউ | ধূমাবতী সিরিজ | লেখক – মনীষ মুখোপাধ্যায়

উপন্যাস – ধূমাবতী সিরিজ, লেখক – মনীষ মুখোপাধ্যায়, প্রকাশক – বেঙ্গল ট্রয়কা

দশ মহাবিদ্যার একজন মহাবিদ্যা – দেবী ধূমাবতীকে নিয়ে মনীষ মুখোপাধ্যায় লিখেছেন দুটি উপন্যাস, ধূমাবতীর মন্দির এবং ধূমাবতীর অভিশাপ। আমি দুটোরই পাঠ প্রতিক্রিয়া জানালাম আলাদাভাবে।

ধূমাবতীর মন্দির – একটি বাচ্চা ছেলে একটি বিশেষ স্থানে গিয়ে হঠাৎ করেই হয়ে যায় প্রচণ্ডভাবে অসুস্থ। ঘটনার অস্বাভাবিকতায় এর কারণ খুঁজতে গিয়ে বেরিয়ে আসে একের পর এক চাঞ্চল্যকর ও রহস্যময় তথ্য। কেউ তন্ত্রবলে জাগ্রত করে এক কঠিন শাপ-কে, এবং তা প্রয়োগ করে ক্ষতিসাধন করতে চায় নির্দিষ্ট একটি পরিবারের। হিংসার বশীভূত হয়ে প্রয়োগ করে উচাটন ক্রিয়া এবং ক্ষতির মাধ্যম হিসেবে বেছে নেয় দেবী ধূমাবতীর প্রচন্ড শক্তিকে।

গল্প হিসেবে বইটি খুবই ভালো। রহস্য, উত্তেজনা এবং প্লট টুইস্টের মাধ্যমে পাঠককে ধরে রাখে শেষ পর্যন্ত। সাহিত্যিক অভীক সরকার যেমন দশ মহাবিদ্যার একজন – দেবী মাতঙ্গীকে নিয়ে কাজ করেছেন তার গল্প ‘ভোগ’-এ, তেমনি মনীষ বাবু এই উপন্যাসে আরেক মহাবিদ্যা দেবী ধূমাবতীকে নিয়ে কাজ করেছেন। হয়তবা সেই জন্যই বেশ কিছু জায়গায় আমি সাদৃশ্যতা অনুভব করেছি দুটো গল্পের মধ্যে। লেখক, দেবী ধূমাবতী এবং তার তন্ত্র ও মন্ত্র নিয়ে গবেষণা করেছেন অনেক, তার জন্য তাঁকে কুর্নিশ। এটি এক নিঃশ্বাসে পড়ে ফেলার মত একটি বই।

ধূমাবতীর অভিশাপ – এই বইয়ের গল্প শুরু হয় আগের খণ্ডের গল্প শেষ হবার ১৮ বছর পর। অনেক কিছুই পাল্টে গিয়েছে এই কয়েক বছরে। কিন্তু কোথাও কোনো সুপ্ত বীজ রয়ে গিয়েছিল, যে আবার জাগিয়ে তোলে দেবী ধূমাবতীর সেই প্রাচীন অভিশাপ, এবং প্রয়োগ করে আগের গল্পে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের উপরেই। শক্তি বাবা (এই সিরিজের নায়ক) -র কানে এই খবর পৌঁছতেই তাঁর নিজস্ব গন্তব্য পরিবর্তন করে ফিরে আসে সেই সাউ পরিবারের দরজায়, এবং খুঁজতে শুরু করে তাদের এই নতুন সমস্যা উদ্ধার করার উপায়।

সিক্যুয়েল হিসেবে এই উপন্যাস আগের বইটি থেকে অনেকটাই আলাদা। যেহেতু ১৮ বছর কেটে গিয়েছে আগের ঘটনার পর থেকে, এবং আগের গল্পের সমস্ত সমস্যার সমাধান ওখানেই হয়ে গিয়েছিল, তাই ওই উপন্যাসের সিক্যুয়েল লেখা একটা চ্যালেঞ্জিং ব্যাপার বটে। মনীষ বাবু এতে সফলও হয়েছেন খুব সুন্দরভাবে। লেখক এই উপন্যাসে আগের প্রায় সমস্ত চরিত্র নিয়েই কাজ করেছেন, অথচ গল্পটি একটি নতুন মোড়কে উপস্থাপিত করেছেন। অধিকাংশ ক্ষেত্রে দেখা যায় এইরকম সিরিয়াল গল্পে ধারাবাহিকতা একইভাবে চলতে থাকে, ফলে সিরিজের পরবর্তী গল্পগুলোতে পাঠকেরা অতি সহজেই বোর হয়ে যান। কিন্তু মনীষ বাবু হয়ত সেই কথা মাথায় রেখে গল্পটাকে সাজিয়েছেন একদম অন্যরকমভাবে, ফলে গল্পে এসেছে অন্য একটা মাত্রা। রহস্য ও প্লট টুইস্ট এখানে প্রথম খণ্ডের থেকেও বেশি। লেখকের গবেষণার ফলস্বরূপ তিনি তন্ত্রের আলোচনা অনেকটা বিস্তারিতভাবে করার চেষ্টা করেছেন। যেকোনো লেখায় গবেষণা একটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, কিন্তু গল্পের বইয়ে গবেষণার আধিক্য অনেক সময় বিরক্তির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এই বইতে তন্ত্রিক ক্রিয়াকলাপের সাথে সাথে বেশ কিছু কাঁচা মন্ত্র উচ্চারিত হয়েছে, যেগুলো আমি বারবার পড়তে গিয়ে ব্যক্তিগতভাবে একটু বিরক্তি অনুভব করেছি। তাছাড়া উপন্যাসটি আমার ভালোই লেগেছে।

Leave a comment